রাউটার কেনার আগে কি কি করা দরকার বা জানা উচিৎ

ওয়াই-ফাই এখন আমাদের প্রতিটি কাজের সাথে আছে মিশে। সেই ওয়াই-ফাই এক্সপেরিয়েন্স স্মুথ রাখার জন্যে চাই ভালো একটি রাউটার। কিন্তু শুধু ভালো রাউটার হলেই হবেনা, সাথে জানতে হবে গুরত্বপূর্ন কয়েকটি বিষয়। একটি রাউটার কেনার আগে যে পাঁচটি বিষয় আপনার অবস্যই খেয়াল রাখা উচিত সেগুলো হচ্ছে:

  • কভারেজ এরিয়া
  • ডিভাইস সংখ্যা
  • রুম সংখ্যা
  • রাউটার রেঞ্জ

এখন আপনার মনে হতে পারে দামি একটা রাউটার কিনলেই তো হয়। তা অবশ্য হয় তবুও ধরেন আপনার যেই রিকোয়ারমেন্ট সেটার জন্যে একটি বাজেট রাউটার ই যথেষ্ঠ, তাহলে আর বাড়তি টাকা দিয়ে দামিটা কেন নিবেন। তাহলে জেনে নেই এই পাঁচটি বিষয় বিস্তরিত তথ্য।

১। কভারেজ এরিয়া

কভারেজ এরিয়া বলতে যেটা বুজাচ্ছি সেটি হচ্ছে, আপনার বাসা, অফিস, দোকান অথবা অন্য যেকোন স্থান যেখানে আপনি রাউটার ব্যাপার করবেন তার আয়াতন কত। আয়তনটি  মিটার বা স্কোয়ার ফিট এ নির্ধারণ করলে আপনার জন্যে খুঁজতে সুবিধা হবে।  কিন্তু অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার কভারেজ এরিয়ায় এমন অনেক  জিনিস থাকে পারে যা রাউটার সিগন্যাল ফ্রিকোয়েন্সিতে বাঁধা তৈরি করতে পারে। এখন ধরেন আপনি একটি ফ্ল্যাটে থাকেন কিন্তু চাচ্ছেন শুধুমাত্র আপনার রুমেই রাউটার ব্যবহার করবেন, সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ফ্ল্যাট পরিমাপ না নিয়ে শুধু রুমের পরিমাপ নিলেই হবে। আপনার রাউটার এর কাভারেজ সেই রুমে পর্যাপ্ত হলেই হবে। বর্তমানে মার্কেটে আবার সিঙ্গেল-ব্যান্ড, ডুয়াল-ব্যান্ড এমনকি ট্রাই-ব্যান্ড এর রাউটার ও পাওয়া যায়।  অবশ্যই প্রতিটি ব্যান্ড এর ফ্রিকোয়েন্সি এক সমান হয় না। অনেক ক্ষেত্রেই ২.৪ Ghz এর কাভারেজ এরিয়া ৫ Ghz থেকে বেশি হয়।

২। ডিভাইস সংখ্যা

এরপর নির্ধারণ করুন বাসায় আপনার মোট কতগুলো ডিভাইস কানেক্টেড থাকবে রাউটার এর সাথে। ধরি আপনি একাই ব্যবহার করবেন সেক্ষেত্রে আপনার কয়টি ডিভাইস হতে পারে, একটি স্মার্টফোন, একটি ল্যাপটপ অথবা ডেক্সটপ। আবার যদি পরিবারের সবাই ব্যবহার করেন তাহলে, কে কয়টি ডিভাইস চালায় সেটার খবর নিন। প্রতিটি রাউটার এর একটি নির্ধারিত ডিভাইস সংখ্যা আছে যার বেশি সে চাপ নিতে পারেনা। সাধারনত সিঙ্গেল ব্যান্ড রাউটারগুলি একসাথে ১৬ টি ডিভাইস খুব স্মুথলি কানেক্ট রাখতে পারে। অন্যদিকে যদি ডুয়াল-ব্যান্ড রাউটার নেন তাহলে ১৬ টির অধিক ডিভাইস অনেক সহজেই চালানো যাবে আবার মেশ রাউটার এর ডিভাইস ক্যাপাসিটি আরও অনেক বেশি। মনে রাখবেন ডিভাইস সংখ্যা যদি অনেক বেশি হয়, সেক্ষত্রে অবশ্যয় বেশি গতি সম্পন্ন রাউটার যেমন ডুয়াল ব্যান্ড এর ৭০০ এমবিপিএস (Mbps) এর বেশি স্পিড এর রাউটার নিতে পারেন।

৩। রুম সংখ্যা

কভারেজ এরিয়া জানার পরেও মোট রুমের সংখ্যা জানা খুব জরুরি। আমরা জানি রাউটার সিগন্যাল ফ্রিকোয়েন্সি খোলা স্থানে বেশি দূর পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম।  আর এই সিগন্যাল ফ্রিকোয়েন্সি পৌঁছানোর পথে অন্যতম বড় একটি বাঁধা হচ্ছে  দেয়াল যা তৈরী করে সিগন্যাল ইন্টাফিয়ারেন্স এবং কমিয়ে ফেলে টোটাল কভারেজ এরিয়া। যদি আপনি শুধু একটি দোকানেই বা রুমে ইউজ করেন তাহলে তো কোন সমস্যাই নেই। এখন যদি দেখেন ৩ থেকে ৪ টি রুম সেক্ষেত্রে এমন রাউটার দেখুন যেটার কাভারেজ অনেক বেশি। অথবা নিতে পারেন অত্যাধুনিক ওয়ালকাটার প্রযুক্তি সম্পন্ন কিছু রাউটার। অধিক দেয়াল কিন্তু স্পীডও কমিয়ে ফেলে।

৪। রাউটার রেঞ্জ

আপনার কভারেজ এরিয়া এবং রাউটার রেঞ্জ সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে কাভারেজ এরিয়া বলতে যা বুজাচ্ছি সেই এরিয়া যার মধ্যে আপনি ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে চাচ্ছেন। অন্যদিকে, রাউটার রেঞ্জ হলো সেই রাউটার কতটুকু দুরত্ত পর্যন্ত তার সিগন্যাল ফ্রিকোয়েন্সি পাঠাতে সক্ষম। সেক্ষেত্রে আমাদের সাজেসন হচ্ছে এমন একটি রাউটার নির্বাচন করবেন যেটির রেঞ্জ আপনার পরিমিত কাভারেজ এরিয়া থেকে বেশি। অবশ্যই সেখানে উপস্থিত থাকা নানা অবজেক্ট যা ঘটায় সিগন্যাল ইন্টারফিয়ারেন্স এবং কমিয়ে দেয় আপনার ইফেক্টিভ রেঞ্জ। রেঞ্জ যদি আপনার একান্তই প্রয়োজন হয়, সেক্ষত্রে আপনি নিয়ে নিতেপারেন রেঞ্জ এক্সটেন্ডার। বাজারে সিঙ্গল এবং ডুয়াল ব্যান্ড এর অনেক রেঞ্জ এক্সটেন্ডার পেয়ে যাবেন। তার থেকেও ভালো অধিক রেঞ্জ এর জন্যে মেশ টেকনোলজি। সিঙ্গেল নেটওয়ার্ক এর মধ্যে থেকেই পাবেন অনেক বেশি রেঞ্জ।

যদি এক কথায় বলি তাহলে, রাউটার কেনার পূর্বেই প্রথমে মেপে নিবেন আপনার কতটুকু কাভারেজ দরকার, তারপর নির্ধারণ করুন মোট ডিভাইস এর সংখ্যা। এর পর দেখেন সেই কাভারেজ এরিয়ার মধ্যে কতগুলি রুম রয়েছে। সব শেষে বেছে নিন সেই রাউটার টি যেটি আপনাকে আপনার নির্দিষ্ট কাভারেজ এর বেশি রেঞ্জ দিতে সক্ষম।